ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া জমজম হাসপাতালের দু’পক্ষ মুখোমুখি, আতঙ্কে রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :
চকরিয়ায় জামাত পরিচালিত জমজম হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ১১ মে বিকালে হাসপাতালের মধ্যে ডাকা দু’পক্ষের সাধারণ সভা পুলিশের বাধার মুখে পন্ড হয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে দু’পক্ষই ভিন্ন স্থানে গোপনে বৈঠকে করেছে বলে তারা জানান। এক কমিটির শেয়ার হোল্ডাররা অভিযোগ করে বলেন সদ্য শাস্তিমুলক বদলী হয়ে যাওয়া চকরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলা হয়েছে। বর্তমান কমিটি থাকার পরও একপক্ষের সভায় জামাতের সাবেক সাংসদ এনামুল হক মঞ্জুকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চিরিঙ্গা হোটেল ডায়মন্ডে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চকরিয়া জমজম হাসপাতালের বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান ডা: মাহবুব কামাল চৌধুরীর পক্ষের পরিচালক প্রকৌশলী নূর হোসেন বলেন, গত বছর ১৪আগষ্ট চকরিয়া জমজম হাসপাতাল লি: বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মাহবুব কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ১১জন পরিচালকের সর্ব সম্মতিক্রমে বর্তমান এমডি গোলাম কবিরকে সরিয়ে নতুন এমডি হিসেবে হাসপাতালের পরিচালক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা: শওকত ওসমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের নেতৃত্ব এই কমিটি সুপ্রীম কোর্টে বহাল রেখেছেন। কিন্তু গোলাম কবির সুপ্রীম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা না মেনে অবৈধ ভাবে এমডির পদটি ধরে রাখতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
অপর দিকে শেয়ারহোল্ডার জিএম আশেক উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, গোলাম কবির হাসপাতালের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসবের প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল ও মামলার হুমকি ধমকি দিচ্ছেন ন। তার স্বেচ্চাচারিতায় জমজম হাসপাতালের শেয়ালহোল্ডার, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সবাই জিম্মী হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের গোলাম কবির নানাভাবে হয়রানী করে। যুদ্ধাপরাধী মামলা ও জামাত শিবিরকে পৃষ্টপোষকতা ছাড়াও জমজম হাসপাতালের গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেন। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন সময়ে মালামাল কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি এনবিআরের এক কর্মকর্তাকে ৫লাখ টাকা ও সদ্য শাস্তিমুলক বদলী হওয়া চকরিয়া বিদ্যূৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়েছেন গোলাম কবির। এমনকী যন্ত্রপাতি কেনা, কম দামের যন্ত্র বেশি দামে কেনা, ভুয়া ভাউচার বিল করেছেন। এছাড়াও তিনি জেলা সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অডিট কমিটি ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে খরচ দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে শুক্রবার চেয়ারম্যান ডা: মাহবুব কামাল চৌধুরীর পক্ষের কমিটি জমজম হাসপাতালে বৈঠক ডাকার ঘোষণা দেন। একইভাবে পাল্টা বৈঠক ডাকেন জামাত নেতা এনামুল হক মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কমিটিও। একই স্থানে দু’পক্ষ বৈঠক ডাকায় পুলিশের বাধার মুখে তা পন্ড হয়ে যায়। তবে দু’পক্ষই পৃথক বৈঠক করেছেন।
চেয়ারম্যান ডা: মাহবুব কামাল চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চকরিয়া পৌরশহরের হোটেলে ডায়মন্ডে, অন্যপক্ষ জামাত নেতা এনামুল হক মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন শেয়ালহোল্ডাররা লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর হোটেল মিডওয়েতে। ওই বৈঠকে এনামুল হক মঞ্জুকে চেয়ারম্যান ও গোলাম কবিরকে এমডি ঘোষণা করা হয়।
স্ব-ঘোষিত নতুন কমিটির এমডি গোলাম কবির জানান, জমজম হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ার হোল্ডারদের নিয়ে আধুনগর মিডওয়েতে বৈঠক করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন। সেখানে এনামুল হক মঞ্জুকে চেয়ারম্যান এবং আমাকে এমডি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সুপ্রীম কোর্টের অর্ডারে কোন কিছুই বলেননি। তিনি দাবী করেন, বৈধ কমিটির নেতৃত্বে হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ধরণের টাকা আত্মসাতের করা হয়নি।

পাঠকের মতামত: